তথ্য ও প্রযুক্তি

চাঁদপুর জেলায় ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনভূক্ত ২৬৬ মসজিদ

  প্রতিনিধি 30 January 2025 , 3:51:27 প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা,৭টি পৌরসভা,৮৯টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৩ শ ৬৫টি গ্রামে ২৫ লাখ মুসলমানের জন্যে ৭ হাজার ২শ ৪২টি দুনিয়ার সবচাইতে পবিত্রতম ও শান্তিময় স্থান মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুরের সব পৌরসভায় মসজিদের সংখ্যা ১ হাজার ২২টি। ৫ শতাধিক মসজিদ হলো-পাঞ্জেগানা। ফলে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি-কচুয়াসহ জেলায় ২শ ৬৬টি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনভূক্ত। বাকীগুলো- বাংলাদেশ ওয়াকফ নিবন্ধনের এর বাহিরে। এতে সরকারি রেজিস্ট্রিকরণ টেকস ও ওয়াকফ টেকস ৫% -দুটোই মসজিদ কমিটি না দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে । অথচ-একটি মসজিদের সকল প্রকার আয় তথা দান বাক্সের আয়সহ ৫% রাজস্ব পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। শুধুই মসজিদ নয়-এতিমখানা,কবরস্থান,মন্দির,গীর্জা,প্যাগোডা,মাদ্রাসা ও হেফজখানা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াকফ নিবন্ধনের অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।

চাঁদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ২১ জানুয়ারি ২০২৫ এর দেয়া পরিসংখ্যান মতে, চাঁদপুর- সদরে ও পৌরসভায় ১,৩১০টি, মতলব দক্ষিণে ও পৌরসভায় ৪৫৫টি, মতলব উত্তরে ও পৌরসভায় ১,০৪০টি, হাজীগঞ্জে ও পৌরসভায় ৯৭৯টি, ফরিদগঞ্জে ও পৌরসভায় ১,০৩১টি, কচুয়ায় ও পৌরসভায় ১, ১৬৭ টি,শাহরাস্তি ও পৌরসভায় ৭৭০টি এবং হাইমচরে ৪৩৩টি মসজিদ রয়েছে। ইদানিং বেশিরভাগ মসজিদই আধুনিক ও উন্নত গ্লাস ও এসএস দ্বারা জানালা,বারান্দা, মসজিদের মেজ ও মিমবার টাইলস দ্বারা সজ্জিত ,কারুকার্যখচ্চিত ও ক্যালিওগ্রাফিপূর্ণ নানা আরবি ভাষায় কোরআনের বাণী সন্নিবেশিত পাথর বা সিরামিক খন্ড ও যথাযথ বিদ্যুৎয়ায়িত। যার ফলে প্রতিটি মসজিদই অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ইবাদত-বন্দেগী করার আধুনিক সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে যে কোনো বয়সীদের নামাজ আদায় করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে।

কর্তব্যরত একজন ইমাম বলেছেন, ‘ মসজিদগুলো দৃষ্টিনন্দন হওয়ার পেছনে রয়েছে-আমাদের প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সমাজহিতৈষীদের অবদান। বিশেষ করে বর্তমানে প্রবাসীদের দানেই মসজিদগুলো দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে।’ অধিকাংশ মসজিদেই জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সাপ্তাহিক সম্মিলনের দিন হিসেবে জুমা দিবসের ন্যায় মর্যাদাবান দিবস আর নেই। এ দিবসটিকে ইসলামি শরিয়তের ভাষায় ‘রাইসুল আইয়াম’ বা দিবসসমূহের সর্দার নামে অভিহিত করা হয়। জুমা শব্দের অর্থ সম্মিলিত হওয়া বা একত্র হওয়া। এ দিবসে দু’রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার জন্য ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই মসজিদে একত্র হয়। তাই এ দিবসকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বা সম্মিলনের দিবস বলে আখ্যায়িত করা হয়। এমনকি আল কোরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরাতুল জুমা নামে একটি সুরাও রয়েছে। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। সমাজে শান্তি-শৃংখলা,মানুষকে সঠিক ও সুন্দর পথে চলার ক্ষেত্রে মসজিদগুলো অসামান্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

বর্তমান চাঁদপুর ওয়াকফ এস্টেস্ট এর পরিদর্শক মো.সাব্বির আহমেদ গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘ বর্তমানে চাঁদপুরের ওয়াকফ এস্টেটের অর্ন্তভ’ক্ত মসজিদের সংখ্যা ২৬৬ টি।২০২৩- ২০২৪ সালে ৫% হারে আদায় করা হয়েছে ৪১ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ বছরে আদায় হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। এটি এখন চলমান রয়েছে। চাঁদপুরের অনেক মসজিদ রয়েছে-ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনদের বাহিরে। অনেক কমিটি মসজিদের আয়-ব্যয় দেখান না। ফলে মসজিদের আয় ও ন্যুনতম দান বাক্সের আয় থেকে ওয়াকফ এস্টেটের সরকারি হার ৫%ও প্রদান করছেন না।’

তিনি আরো বলেন,‘আমি প্রতিনিয়তই চেষ্ঠা করছি ৫% রেন্ট আদায় করার। খতিব বা ইমামগণ মসজিদে চাকুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আয়ের-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ করে ৫% রেন্ট পরিশোধ করার দায়িত্ব মসজিদ কমিটির ; খতিব বা ইমামেরে নয় ।’

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতওয়াল্লী ও সমাজবিজ্ঞানী প্রিন্স শাকিল আহমেদ ২৬ জানুয়ারি মুঠোফোনে বলেন ,‘জেলায় যতগুলো ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ মসজিদ রয়েছে-তম্মধ্যে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ অন্যতম। তাই ইফা ও বাংলাদেশ ওয়াকফ এস্টেটের সকল নীতিমালা অনুসরণ করে জেলার এ ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শতাব্দীকালের সেরা এ মসজিদ প্রশাসন সকল আয়ের উৎসের ৫% হারে পরিশোধ করে আসছে।’ জেলার সবচাইতে বড় মসজিদ হলো-হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। যা জেলাসহ দেশের মধ্যে এটি ইতিহাস-ঐতিহ্যে ইতোমধ্যেই সুপরিচিতি লাভ করেছে। চাঁদপুরের সব চাইতে পুরনো মসজিদও হচ্ছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী (র.)হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ওয়াকীফ, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মোতওয়াল্লী।’

বর্তমানে সারা দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৪৯ হাজার ৭ শ ১৯ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। তাঁদের প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়। জেলার বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, অলিপুর শাহ আলমগীরী মসজিদ,আলীগঞ্জ মাদ্দাখা মসজিদ, চাঁদপুর পৌরসভায় বাইতুল আমিন মসজিদ,বেগম মসজিদ,চিশতিয়া মসজিদ,পুরাণ বাজার জামে মসজিদ, চেয়ারম্যান ঘাট বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ,কালেক্ট্ররেট জামে মসজিদ,বাসস্ট্যান্ড গোরে-এ গরীবা জামে মসজিদ, বাবুরহাট জামে মসজিদ, আবদুল করীম পাটওয়ারী জামে মসজিদ, বড়স্টেশন জামে মসজিদ,দাসাদী জামে মসজিদ ও কল্যান্দী জামে মসজিদ। ইফার দেয়া তথ্য মতে, জেলার ১ হাজার ২শ ৩৬টি মসজিদে রয়েছে শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র ও ২৫০ টি নূরানী কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র। মসজিদের ইমামরা সেখানে দ্বীনি শিক্ষাসহ শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ